অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ব্রিটিশ জনগণের রায়ের পর ইউরোপজুড়েই তোলপাড় চলছে।
এই বিতর্কের অংশ হয়ে উঠেছে রাশিয়াও।
ই ইউতে থেকে যাওয়ার পক্ষে যারা প্রচারণা চালিয়েছিলেন তাদের দাবি ছিলো যে ক্রেমলিন গোপনে গোপনে ছেড়ে যাওয়ার পক্ষকে সমর্থন করছে। রাশিয়ার উদ্দেশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দুর্বল করা।
এমনকি প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মুখেও শোনা গেছে, ব্রিটেন ই ইউ ছেড়ে গেলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘হয়তো খুশি হবেন’ এধরনের কথাও।
শেষ পর্যন্ত ৫২ শতাংশ ভোটার রায় দিয়েছেন বিচ্ছেদের পক্ষে।
তো, মি. পুতিন কি খুশি হয়েছেন?
গণভোটের ফলাফল জানা যাওয়ার পর শুক্রবার প্রেসিডেন্ট পুতিন সাংবাদিকদের বলেছেন, “এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো দিকই আছে।”
তিনি কিছু খারাপ দিক নিয়েও কথা বলেছেন। বিশেষ করে অর্থনীতিকে গণভোটের এই রায় কিভাবে অস্থির করে তুলতে পারে সেবিষয়ে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন।
তাহলে ‘ইতিবাচক’ দিকগুলো কি? ইউরোপীয় এই জোট থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদে রাশিয়ার কি লাভ?
মস্কোতে বিবিসির সংবাদদাতা স্টিভ রোজেনবার্গ এবিষয়ে তার কিছু ধারণার কথা তুলে ধরছেন:
নিজের বাড়ির মতো আর কোন জায় গা নেই (এবং মি. পুতিনের মতো আর কোন প্রেসিডেন্টও নাই)
যুক্তরাজ্য এবং ই ইউ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেছে। এখন কি ঘটবে? যুক্তরাজ্য কি ভেঙে যাবে? ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্যান্য দেশগুলোও কি ব্রিটেনকে দেখে জোট ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হবে?
ব্রিটেনের এই বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে এটা নিশ্চিত যে আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা হবে বিশ্বের, বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে, যে ধরনের অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে তার তুলনায় রাশিয়া কতোটা স্থিতিশীল রয়েছে। একইসাথে এটাও দেখানো হবে প্রেসিডেন্ট পুতিন কতোটা ‘শক্তিশালী।’
এবছরের শেষের দিকে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে সংসদ নির্বাচন। তার আগে এধরনের প্রচারণা ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড রাশিয়াকে আরো চাঙ্গা করবে এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনকেও।
ইউক্রেনে মস্কোর হস্তক্ষেপের কারণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলো। আর এখন ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার ফলে ই ইউ প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছে।
রাশিয়া এরকম কিছু চেয়ে থাকলে সেটাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এটা হচ্ছে অন্যের দুঃখে কিছুটা খুশি হওয়ার মতো, যাকে বলা হয় শাডেনফ্রয়েডে।
“এটা কৌতুক নয়। পাউন্ড হবে নতুন রুবল,” শুক্রবার স্টারলিং এর দরপতনে এই মন্তব্য করেছিলেন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের একজন উপস্থাপক।
নিষেধাজ্ঞা কি উঠে যাবে?
মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বিশ্বাস করেন, ব্রিটেনের এই বিচ্ছেদের কারণে রাশিয়া লাভবান হয়েছে।
তিনি টুইট করেছেন, “যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে আর কেউ থাকবে না যারা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্যে উঠেপড়ে লাগতে পারে।”
রাশিয়ায় একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলেক্সেই মুখিন লিখেছেন, “ই ইউর সবকটি সদস্য দেশের মধ্যে ব্রিটেনই রাশিয়ার প্রতি সবচে বেশি আগ্রাসী।”
“তারা সবসময় আমাদের সমালোচনা করেছে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিসাধন করতে চেয়েছে। এখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রাশিয়ার সাথে আরো বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।”
এটা রাশিয়ার কথা, মস্কো হয়তো এরকম করেই ভাবতে পছন্দ করে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ব্রিটেন ছাড়াও ই ইউতে পোল্যান্ড, সুইডেনসহ আরো কয়েকটি দেশ আছে যেগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর।
নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কি মস্কোপন্থী হতে পারেন?
বর্তমানে ক্রেমলিন ও ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সাথে প্রেমের কোনো সম্পর্ক নেই। ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষকে সমর্থন করেছেন। মি. পুতিনও বলেছেন, ডেভিড ক্যামেরন ইউরোপকে ব্ল্যাকমেইল করতে গণভোটের ডাক দিয়েছিলেন।
ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগের ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট পুতিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, নতুন বাস্তবতায় রাশিয়ার সাথে ব্রিটেনের সম্পর্ক আরো উন্নত হবে। (অন্যভাবে বলা যায়, রাশিয়া আশা করছে ব্রিটেনে এমন একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন যিনি রাশিয়াকে পছন্দ করবেন)
বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে যারা প্রচারণা চালিয়েছেন তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন রাজনীতিকও কিন্তু রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক আরো ভালো করার কথা বলেছেন।
ছ’মাস আগে বরিস জনসন ব্রিটেনের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামিক স্টেটকে মোকাবেলায় রাশিয়ার সাথে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্যে।
লন্ডনের সাবেক এই মেয়র বলেছিলেন, “পুতিনের জন্যে যা ভালো সেটা যে পশ্চিমের জন্যে সবসময় খারাপ হবে এই ধারণাটা সত্য নয়।
ক্রেমলিনও হয়তো তার এই কথাটা মনে রেখেছে।